সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীঃ জীবন ও কর্ম
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের শুরুতে যে সব মুসলিম সাহিত্যিক ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে সাহিত্যিক এবং রাজনীতিবিদ। লিখেছেন কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং ভ্রমণ-কাহিনী পাশাপাশি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে করে গেছেন রাজনীতি। এই বরণ্য কবি এবং রাজনীতিবিদ জন্ম গ্রহণ করেন ১৩ জুলাই ১৮৮০ সালে তৎকালীন পাবনা জেলায়, বর্তমানে সিরাজগঞ্জে। সিরাজী ছিল তাঁর পারিবারিক ধর্মীয় পদবী।
অভাবের কারণে উচ্চ শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত হলেও নিজের চেষ্টায় তিনি সাহিত্য-ইতিহাস-ধর্মনীতি-সমাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। বিশ শতকের শুরুতে ভারতীয় কংগ্রেসে যোগদান করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে মুসলীম লীগে যোগদান করেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দেদালনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাঙালী মুসলমানের মাতৃভাষাবাংলা কিনা এই বিতর্কে তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে দৃঢ় মত প্রকাশ করেছিলেন।
১৮৯৯ সালে ‘অনল প্রবাহ’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশ পেলে ইংরেজ সরকার এই কাব্যগ্রন্থটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কবি এক পর্যায়ে দুই বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন।
বলকান যুদ্ধে তুরস্ককে সাহায্য করার জন্য ভারতবর্ষ থেকে ১৯১২ সালে যে মেডিকেল টিম প্রেরণ করা হয়েছিল তিনি ছিলেন সেই টিমের একজন সদস্য। সেখানে যুদ্ধে আহত সৈনিকদের সেবার অবদান স্বরূপ তুরস্কের সুলতান কর্তৃক গাজী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
খিলাফত আন্দোলন এবং ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সালে সংঘটিত অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে স্বরাজ্যদল গঠিত হলে তাতে যেগদান করেন।
তিনি নূর নামে একটি মাসিক এবং সুলতান নামেও একটি সাপ্তাহিত পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
সাহিত্যিক হিসেবে তিনি ছিলেন মূলত ইসলামী পুনর্জাগরণবাদী লেখক। তিনি ভারতবর্ষে হীনবল ইসলামের পুনর্জাগরণ চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্য নিয়েই ধারন করেছিলেন লেখনি। মুসলমানদের নবজাগরণ এবং দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জন ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। এ কারণেই জাতীয় জাগরণ মূলক কাব্য সৃষ্টিতে ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত এবং নজরুলের পূর্বসূরি। ভারতবর্ষে মুসলমানদের অন্ধকার কালে তাঁর কাব্য এবং অনলবর্ষী বক্তৃতা মুসলিম জাতিকে যেমন অনুপ্রাণিত করেছিল তেমনি আলোর পথও দেখিয়েছিল। সাড়া জেগেছিল বাঙালী মুসলমানের প্রাণে।
কাব্যগ্রন্থ
১) অনল প্রবাহ (১৯০০)
২) উচ্ছ্বাস (১৯০৭)
৩) উদ্বোধন (১৯০৭)
৪) নব উদ্দীপনা
৫) স্পেন বিজয় কাব্য (১৯১৪)
৬) মহাশিক্ষা
উপন্যাস
১) তারাবাঈ (১৯০৮)
২) রায়নন্দিনী (১৯১৬)
৩) নূর উদ্দীন (১৯২৩)
৪) ফিরোজা বেগম (১৯২৩)
৫) জাহানারা (১৯৩১)
সঙ্গীত
১) সঙ্গীত সঞ্জীবনী (১৯১৬)
২) প্রেমাঞ্জলি (১৯১৬)
প্রবন্ধ
১) স্বজাতি প্রেম (১৯০৯)
২) তুর্কি নারী জীবন (১৯১৩)
৩) আদব কায়দা শিক্ষা (১৯১৪)
৪) স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা (১৯১৬)
৫) সুচিন্তা (১৯১৬)
৬) মহানগরী কর্ডোভা
ভ্রমণ কাহিনী
১) তুরস্ক ভ্রমণ (১৯১০)
বজ্রকণ্ঠের এই কবি ১৯৩১ সালের ১৭ জুলাই ৫১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন