আবুল মনসুর আহমদের জীবন ও কর্ম


আবুল মনসুর আহমদের জীবন ও কর্ম

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা বিদ্রুপাত্মক রচনার রচয়িতা আবুল মনসুর আহমদ। তিনি একাধারে আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যে এমন বর্ণাঢ্য চরিত্রের সাহিত্যিক খুব কমই আছেন। 

আবুল মনসুর আহমদের জন্ম বাংলা ১৩০৫ সনের ১৯ ভাদ্র, ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলা গ্রাম। পিতার নাম ছিল আব্দুর রহিম ফরাযী, মাতার নাম মীর জাহান বেগম।   

আবুল মনসুর আহমদ ১৯১৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার নাসিরাবাদের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন।  ১৯১৯ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতার রিপন ল কলেজে ল ক্লাসে ভর্তি হয়ে ১৯২৯ সালে বিএল পাশ করেন। 

তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। ১৯২৩-১৯২৬ পর্যন্ত ছিলেন সাপ্তাহিক সোলতান এবং মোহাম্মদী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক। দি মুসলমান পত্রিকায় ১৯২৬-১৯২৯ পর্যন্ত এবং ১৯৩৮ সালে দৈনিক কৃষক পত্রিকায় সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৪১ সালে যোগ দেন নবযুগ পত্রিকায়। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

এর ফাঁকে তিনি ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহে আইন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।

রাজনীতিতেও আবুল মনসুর আহমদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। খিলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলন দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হলেও এ নিয়ে তিনে সন্দিহান ছিলেন। ১৯২৯ সালে “বাংলার প্রজা পার্টি”-তে যোগ দেন এবং ময়মনসিংহ জেলায় দক্ষতার সঙ্গে “কৃষক প্রজা সমিতি” গঠন করেন। পরে মুসলিম লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের কোয়ালিশন গঠন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৪০ এর পাকিস্তান আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদ লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে পূর্ববঙ্গ পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ১৯৫৬ সালে প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী এবং ৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রির পদ লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব সরকার সামরিক শাসন জারি করলে কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। পরে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। 

সাহিত্যিক হিসেবেও আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন অসাধারণ। তিনি খুব বেশি বই লিখেননি কিন্তু যেগুলো লিখেছেন সেগুলো এখনও প্রসঙ্গিক এবং বহুল পঠিত। তিনি লিখেছেন-

ছোটগল্প: 

আয়না (১৯৩৬/৩৭)

ফুডকনফারেন্স (১৯৪৪)

গালিভারের সফর নামা

স্মৃতিকথা:

আত্মকথা (১৯৭৮)

আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চশ বছর (১৯৬৯)

শেরে বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২)

উপন্যাস ও অন্যান্য:

হুযুর কেবলা (১৯৩৫)

সত্যমিথ্যা (১৯৫৩)

জীবনক্ষুধা (১৯৫৫)

আসমানী পর্দা (১৯৬৪)

বাংলাদেশের কালচার (১৯৬৬)

আবে হায়াত (১৯৬৮)

সাহিত্য সাধনায় তিনি ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক ইত্যাদি লাভ করেন। 

মহান এ সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক ১৯৭৯ সালে ১৮ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন